বরিশাল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মোঃ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুস, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। টানা প্রায় ২৪ বছর ধরে একই অফিসে একাধিক পদে কর্মরত থেকে গড়ে তুলেছেন এক ভয়ঙ্কর দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট। সরকার বদলালেও মিজানুর রহমান ছিলেন সব সময়ই অক্ষত, রাজারহালে।
অভিযোগ উঠেছে, অফিসে নানা কাজ করাতে ঘুস ছাড়া উপায় নেই। বিশেষ করে নতুন চাকরিপ্রার্থীদের ফিটনেস সার্টিফিকেট বা বিদেশগামীদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষার কাজ করাতে তাকে দিতে হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। এক্ষেত্রে তিনি নির্দিষ্ট করে দেন লাইফ লাইন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করাতে হবে। কারণ, সেখান থেকে তিনি জনপ্রতি কমিশন গ্রহণ করেন। অন্য কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে রিপোর্ট আনলে তিনি সার্টিফিকেট আটকে রাখেন।
মিজানুর রহমান শুধুমাত্র চাকরিজীবীদের নয়, বরিশাল জেলার বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নবায়ন বা অনুমোদনের ক্ষেত্রেও নির্ধারিত হারে ঘুস দাবি করেন। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে ঘুস-দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদ। বাকেরগঞ্জ ও বরিশালে তার নামে ও বেনামে জমি, ভবন, নগদ অর্থ, এফডিআর ও সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এমনকি বাকেরগঞ্জে নিজস্ব একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারও প্রতিষ্ঠা করেছেন।
তবে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। বদলির ভয় দেখানো হয় কিংবা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অভিযোগ চাপা দেওয়া হয়। সম্প্রতি বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কাছে দেওয়া এক লিখিত অভিযোগ তদন্তের আগেই অভিযোগকারীকে ম্যানেজ করে ফেলেন মিজানুর রহমান। তদন্ত কমিটিও কার্যত নিরব থেকে যায়।
একজন ভুক্তভোগী জাফর অভিযোগ করেন, ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য ১৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়, যার মধ্যে ১০ হাজার টাকা তিনি পরিশোধ করেন। এ টাকা সরাসরি হেড ক্লার্ক মিজানের পকেটে যায় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে সদ্য যোগদান করা বরিশালের নতুন সিভিল সার্জন ডাঃ এস.এম. মনজুর-এ-এলাহী এসব অনিয়ম রোধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। তিনি অফিসে বড় করে একটি নোটিশ দিয়েছেন যাতে ঘুস না দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা এই শক্তিশালী সিন্ডিকেট এখনও দাপটের সঙ্গে সক্রিয়।
মিজানুর রহমান অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, ২৪ বছর ধরে একাধিক পদে কাজ করছেন এবং বাকেরগঞ্জ ও বরিশালে তার কিছু জমি ও ভবন রয়েছে, তবে তা আইনসম্মত। লাইফ লাইন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ফিটনেস পরীক্ষার জন্য কাউকে পাঠানোর অভিযোগও তিনি নাকচ করে দিয়েছেন।
বরিশালের সিভিল সার্জন বলেন, “কোনো দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুস সহ্য করা হবে না। অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”