প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৩২
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই সফরে আলোচনায় উঠে এসেছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, কূটনৈতিক বিনিময় জোরদার এবং সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় চালুর বিষয়। তবে ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে এই সফরকে ভারতের কূটনৈতিক মহল ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে।
ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতে, ঢাকা-ইসলামাবাদের নতুন ঘনিষ্ঠতা নয়াদিল্লির নিরাপত্তা স্বার্থে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে শেখ হাসিনার ভারতপন্থী অবস্থান বাংলাদেশকে ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়েছে।
মাস্কাটে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সে ভারত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল যে সার্ক পুনরুজ্জীবন নিয়ে আলোচনা করা উচিত নয়। কারণ দিল্লির মতে, এটি পাকিস্তানের কূটনৈতিক অবস্থানকে সমর্থন করার সমান। অথচ মাস কয়েকের ব্যবধানেই বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে প্রথমবারের মতো চাল আমদানি করে এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি ভিসা বিধিনিষেধ শিথিল করার পথে এগোয়।
সর্বশেষ ইসহাক দারের ঢাকা সফরে তিনি শুধু সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গেই নয়, বিরোধী শিবিরের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। আলোচনায় ১৯৭১ সালের গণহত্যা প্রসঙ্গে তিনি ‘মীমাংসিত বিষয়’ হিসেবে মন্তব্য করেন এবং ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
ভারতের কূটনৈতিক মহল মনে করছে, বাংলাদেশে পাকিস্তানি প্রভাব বৃদ্ধি পেলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে পারে। অতীতে বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় এ অঞ্চলে জঙ্গি কার্যক্রম বৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় অস্ত্র পাচার কেলেঙ্কারিও ঘটেছিল, যা ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর জন্য আনা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার ভিনা সিক্রি মনে করিয়ে দিয়েছেন, অতীতে জঙ্গিদের ঘাঁটি বাংলাদেশের ভেতরে তৈরি হওয়ার ইতিহাসের কথা। ভারত মনে করছে, একই ধরনের অবস্থা পুনরায় সৃষ্টি হলে সীমান্ত অরক্ষিত এলাকাগুলো ব্যবহার করে ভারতের নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে।
এছাড়াও দিল্লি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এবং পাকিস্তানের আইএসআইয়ের মধ্যে কোনো সহযোগিতা তৈরি হলে তা ভারতের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
এখন কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কের এই নতুন ধারা কি দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যকে পরিবর্তন করে দেবে, নাকি ভারত ও বাংলাদেশ নতুন বাস্তবতায় একসঙ্গে কাজ করার পথ খুঁজে নেবে।
সূত্র বিবিসি