যদি চায় জনতা, মানতে বাধ্য ক্ষমতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত
প্রকাশিত: শনিবার ১৩ই মে ২০২৩ ০৯:২৫ অপরাহ্ন
যদি চায় জনতা, মানতে বাধ্য ক্ষমতা

ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত লেখা , যা হবহু তুলে ধরা হলো । পাকিস্তান সরকার এবং আর্মী ইন্টেলিজেন্সের সাজানো ১১টি মামলার পাতানো খেলায় ইমরান খানকে আটকে রাখা গেলোনা। 


পাকিস্তানে দুই দিন নেতাবিহীন হাজার হাজার কর্মী ও জনতা আর্মী কমান্ডারদের বাড়ীঘর, থানা, স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বাড়িতে, গাড়ীতে আগুন দেয়া শুরু করলো। রাস্তাঘাট ব্লক হয়ে গেলো। রাস্তায় সেনা নামানো হলো কিন্তু ফিল্ড কমান্ডাররা যখন জনতার উপরে ঢালাও গুলির হুকুম দিতে অস্বীকার করলো, তখন পাকিস্তান আর্মী চিফ জেনারেল আসিম ও আর্মী ইন্টেলিজেন্স বুঝলো দেশের নিয়ন্ত্রণ আর তাদের হাতে থাকবেনা। 


মাসের পর মাস ইমরানের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো চালিয়ে তাকে ও তার দলকে পঙ্গু করে দেয়ার পরিকল্পনা ছিলো সেই সব ষড়যন্ত্র কারো অঙ্গুলির ইশারায় মাত্র একদিনে স্থগিত হয়ে গেলো। পাকিস্তানী ক্ষমতাসীনরা বুঝতে পারলো, দেরী করলে সরকারী ও রাজনৈতিক লুটেরাদের ঘরবাড়ী, প্লট, জনতা দখল করে নিবে। 


এখন পাকিস্তানে যা যা ঘটতে পারে তা হলো, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন ইমরান শান্তির শর্তাবলীর নির্দেশনা জারী করবেন। আর্মী চিফ আসীম মুনীরকে হয়তো অবসরে যেতে হবে। আইএসআই চিফ লে:জে: নাদিম আহমেদ আনজুমকেও যেতে হবে হয়তো। সব ডার্টি হ্যারি রাজনৈতিক লুটেরা এবং সুবিধাভোগীরা নানা রকম ঝামেলায় দেশ ত্যাগের চেষ্টা করবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে যারা ফ্রী ও ফেয়ার উন্মুক্ত নির্বাচন পরিচালনা করবে। 


এতদিনের ক্ষমতাশীল প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এখন হাটুগেড়ে নতজানু। তার গোপন ইশারায় যারা মিথ্যা মামলা সাজিয়েছিল তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। তাই হতাশ প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ গতকাল রাষ্ট্রীয় টিভিতে প্রচারিত মন্ত্রিসভার বক্তৃতায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছেন, বিচারকরা ইমরান খানের পক্ষে ছিলেন এবং তাদের রায় "পাকিস্তানে ন্যায়বিচারের মৃত্যু" ঘটিয়েছে এবং ইমরান খান দেশকে বিভক্ত করেছেন। 


গত ৭৫ বছর ধরে পাকিস্তানের সমস্ত ক্ষমতার মালিক ছিলো পাকিস্তান আর্মী। ১৯৫৮ সনে আর্মী চিফ ফিল্ড-মার্শাল আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে 'উন্নয়নের দশক' প্রচারণা চালালেও উন্নয়নে শেষ রক্ষা হয়নি। পূর্ব পাকিস্তানে ভালোই উন্নয়ন হয়েছিলো আইয়ুব আমলে তবে পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় অনেক কম ছিলো। আমাদের মাইলফলক আর্কিটেক্ট লুই কানের 'পোয়েট্রি অব ব্রিকস' সংসদ ভবন তারই উন্নয়নকর্মের ফসল ছিলো। কিন্তু বাংলার মানুষ দুই অংশের উন্নয়ন চেয়েছে সমান ভাবে আর চেয়েছিলো সরাসরি ভোটের অধিকার, আইয়ুব খান দিয়েছিলেন মৌলিক গণতন্ত্রের গোজামিল ভোটের অনধিকার। বাঙালী ধ্বজভঙ্গ মোনায়েম খানের মতো চামুচ উকিলকে বাংলার গভর্নর বানিয়ে মানুষ শুধু তার মুখে 'আমার আইয়ুব আমার আইয়ুব, জিকির শুনেছে। 


ধৈর্যহারা, অতি বিরক্ত তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের ছাত্র জনতার প্রচন্ড আন্দোলন শুরু হয় ডাকসুর নেতৃত্বে এবং ১৯৬৯ সনে আইউব শাহীর পতন হয়।  ১৯৭০ সনের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবগুলি আসনে নিরঙ্কুশ জয়ী হলেও ল্যান্ডলর্ড ভুট্টো আর মাথামোটা মদ্যপ আর্মী চিফ ইয়াহিয়া খান আর জেনারেল পোড়া-মাটন টিক্কা খানের গোয়ার্তুমিতে ১৯৭১ সনে তারা পূর্ব পাকিস্তান হারিয়েছে আর আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ।  


পাকিস্তানের পার্লামেন্ট সব সামন্ত প্রভুদের দখলে, বিজনেস ম্যানরা আর্মীর যোগসাজশে দেশ চালায়। হঠকারিতা, নিজ জাতির উপর নিষ্ঠুরতা, অহংকার আর অবিচার দিয়ে ভরা পাকিস্তান আর্মীর ইতিহাস। 


প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কারণে ৭৫ বছর পর এই প্রথম পাকিস্তান আর্মী তাদের জনগণের সমর্থন হারালো। 


জনতার সমর্থন না থাকলে হাতে গোনা কয়েকটি এটম বোমা হারাতে বেশিদিন সময় লাগবে না। 


একটি মুসলিম দেশে আনবিক বোমা থাকুক তা পৃথিবীর কিছু দেশ কখনো চাইবে না। তাই দেশি- বিদেশি ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র এখন পাকিস্তান। 


কট্টর ভারতপন্থী কিছু বুদ্ধিজীবী মনে করেন, ইমরান খানের কারণে সবচেয়ে বেশি লাভবান হলো ভারত। ইমরানকে ফাঁসাতে গিয়ে পাকিস্তান আর্মি তাদের জন্মলগ্ন থেকে বর্তমান ইতিহাস পর্যন্ত এখন মরালি সবচেয়ে দুর্বল। এনারা মনে করেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে না দিলে আর পুরানো স্টাইলে দুর্নীতি চালাতে থাকলে পাকিস্তান আর্মী তাদের দেশকেই হারিয়ে ফেলবে। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ এবং দেশপ্রেমিক পাকিস্তানী প্রবাসীরা এটি অনুভব করছেন, তাই তাদের বর্তমান লড়াইকে তারা বলছেন মুক্তির লড়াই, স্বাধীনতার যুদ্ধ। 


ঠিক পঞ্চাশ বছর আগের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মতই পাকিস্তানের জনসাধারণ মুক্তি চাচ্ছে আর্মীর একরোখা অত্যাচার ও সামন্ত রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো ভৌগোলিক স্বাধীনতা পাবার সহজ উপায় নেই তাদের। তবুও বর্তমান প্রজন্মের অনেক পাকিস্তানী নিজেদের পরাধীনতা অনুভব করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনকে এখন সঠিক ও ন্যায্য বলা শুরু করেছেন, প্রায়শঃই তারা বলেন, বর্তমানে তাদেরও একজন শেখ মুজিবুর রহমানের মতো ঝকঝকে ব্যক্তিত্বের নেতা দরকার। 


ইমরান খানের মধ্য দিয়ে তারা ৬৯ আর একাত্তরের পূর্বপাকিস্তানী সংগ্রামী ছাত্র জনতার নেতার সাযুজ্য খোঁজেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক পন্ডিতরা এরকম কোন সাযুজ্য খুঁজে না পেয়ে বলেন, বর্তমান গর্দভ সরকারের বোকামির কারণে ইমরান খান খামাখা বেশি মূল্যায়িত হয়েছেন। তিনিও আর্মীর মাধ্যমেই ইলেকশন জিতেছিলেন বলে কান কথা আছে। 


এত কিছুর পরেও পাকিস্তানেও খোন্দকার মোশতাকদের মতো মানুষদের তরফ থেকে জনতার সাথে বেইমানীর ভয় আছে। এমকিউএম এর নেতা  মওলানা ফজলুর রহমান ইমরান জোট ছেড়ে শেহবাজকে সমর্থন দিয়েছিলেন। নতুন পরিস্থিতিতে এই আলেম নেতার নতুন ভূমিকা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।