মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চিকিৎসক সংকট, ওষুধের অভাব, অনিয়ম-দুর্নীতি ও চরম অব্যবস্থাপনার কারণে নিজেই যেন রোগীতে পরিণত হয়েছে। চার লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র সরকারি চিকিৎসার ভরসাস্থল এই হাসপাতালে রোগীরা প্রতিদিনই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও যথাযথ জনবল নেই। চিকিৎসক, মেডিকেল অফিসার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নিরাপত্তাকর্মীসহ প্রায় ৫০টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ফলে বহির্বিভাগ চালাতে হচ্ছে উপসহকারী মেডিকেল অফিসারদের। জরুরি ভিত্তিতে সিজারিয়ান অপারেশন না হওয়ায় রোগীরা বাধ্য হচ্ছেন প্রাইভেট ক্লিনিকের দ্বারস্থ হতে।
রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে আধুনিক ভবন নেই, নেই কার্যকর জেনারেটর, পানির ট্যাংকি কিংবা যথাযথ চিকিৎসা সরঞ্জাম। সিজারিয়ান সেবা বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে সর্বত্র ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে আছে। সিঁড়ি, ওয়ার্ড ও জানালার পাশে জমে থাকা ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও পরিত্যক্ত খাবারের কারণে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ রোগী ও স্বজনরা। বৃষ্টির দিনে জরাজীর্ণ ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, মাঝে মাঝে ধসে পড়ে পলেস্তার।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগী সামছুদ্দিন বলেন, হাসপাতালে গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়ার অভাবে সিজারিয়ান সেবা বন্ধ। এক্স-রে মেশিনও অকেজো। ফলে রোগীদের বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে সেবা নিতে হচ্ছে। ভর্তি রোগী শাফিয়া বলেন, বৃষ্টির পানি ছাদ দিয়ে পড়ে এবং বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে থাকতে হয়। “আমাদের এই হাসপাতাল নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে।”
এ অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে সক্রিয় দালালচক্র। তারা রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে, যেখানে অনেকেই অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া দীর্ঘ ছয় বছর ধরে পদে থেকে কোনো উন্নতি আনতে পারেননি, বরং ব্যক্তিগতভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
এ বিষয়ে মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া বলেন, “৫০টি পদ শূন্য। চিকিৎসক সংকটের মধ্যেও আমরা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”