প্রকাশ: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৫
মানবজাতির কল্যাণ ও শান্তির জন্য ইসলাম যে মৌলিক শিক্ষা প্রদান করেছে তার অন্যতম হচ্ছে দয়া ও মানবিকতা। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বহু স্থানে মানুষকে একে অপরের প্রতি দয়া ও সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই দয়ার শিক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। তিনি শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবতার জন্য দয়া ও করুণার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।
রাসূলের (সা.) জীবনে দেখা যায় তিনি সব সময় এতিম, অসহায় ও দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতেন। এক হাদিসে এসেছে, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি এতিমের দায়িত্ব নেয় এবং তার যত্ন নেয় সে জান্নাতে রাসূলের (সা.) সঙ্গে থাকবে। এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, ইসলামে মানবিক দায়িত্ব পালন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে যারা নিঃস্ব বা সহায়হীন, তাদের পাশে দাঁড়ানো শুধু দয়া নয়, বরং এটি ঈমানেরই অংশ।
তিনি দয়ার মূর্ত প্রতীক হিসেবে পশু-পাখির প্রতিও সহানুভূতি প্রদর্শন করেছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এক নারী একটি বিড়ালকে বন্দি করে রাখায় তার প্রতি দয়া না দেখানোর কারণে আল্লাহ তাকে শাস্তি দিয়েছেন। অপরদিকে, এক ব্যক্তি তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেছেন। এর মাধ্যমে রাসূল (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন যে দয়া কেবল মানুষের প্রতিই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আল্লাহর সৃষ্টির প্রতিটি জীবের প্রতিই তা প্রযোজ্য।
সমাজের দুর্বল ও নিপীড়িত শ্রেণির পাশে দাঁড়ানোকে তিনি ঈমানের পরিচায়ক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য সেই জিনিস কামনা করে যা সে নিজের জন্য কামনা করে। এই শিক্ষা মানবতার মধ্যে প্রকৃত ভ্রাতৃত্ব ও সমবেদনার ভিত্তি তৈরি করে।
রাসূল (সা.) শুধু দয়া প্রদর্শনের শিক্ষা দেননি, বরং নিজ জীবনে তা বাস্তবায়ন করেছেন। তায়েফের ঘটনার কথা উল্লেখযোগ্য, যেখানে তিনি প্রচণ্ড নির্যাতনের শিকার হয়েও প্রতিশোধ না নিয়ে দোয়া করেছিলেন যেন তাদের সন্তানরা ঈমান আনতে পারে। এটি মানবিকতার এমন দৃষ্টান্ত যা ইতিহাসে বিরল।
আজকের সমাজে অস্থিরতা, সহিংসতা ও অনৈতিকতার মূল কারণ হচ্ছে দয়া ও মানবিকতার অভাব। মানুষ একে অপরের প্রতি সহানুভূতি হারিয়ে ফেলছে, যা ভ্রাতৃত্ববোধকে দুর্বল করছে। ইসলামের শিক্ষা হলো দয়া ও মানবিকতার ভিত্তিতে সমাজ গঠন করা, যেখানে ধনী-গরিব, শক্তিশালী-দুর্বল সবার জন্য থাকবে সমান অধিকার ও সম্মান।
রাসূলের (সা.) জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি আমরা নিজেদের মধ্যে দয়া ও মানবিকতা ছড়িয়ে দিতে পারি তবে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। দয়া শুধু একটি নৈতিক গুণ নয়, বরং এটি একটি সামাজিক শক্তি যা মানুষকে একত্রিত করে। ইসলাম এই দয়ার শক্তিকেই মানবতার মুক্তির পথ হিসেবে দেখিয়েছে।
অতএব, আজকের দিনে দয়া ও মানবিকতার শিক্ষা গ্রহণ করা আমাদের জন্য অপরিহার্য। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন অনুসরণ করে যদি আমরা নিজেদের জীবনকে সাজাতে পারি, তবে পৃথিবী হবে শান্তিময় ও কল্যাণমুখী। দয়া ও মানবিকতা শুধু দুনিয়ার শান্তির জন্য নয়, বরং আখিরাতের সাফল্যের জন্যও অপরিহার্য পথ।