প্রকাশ: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩২
শিক্ষা মানুষের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে শিক্ষা তখনই পূর্ণতা লাভ করে যখন এর সাথে নৈতিকতার সমন্বয় ঘটে। আজকের বিশ্বে আমরা দেখি অনেকেই উচ্চশিক্ষা অর্জন করছে, কিন্তু নৈতিকতার অভাবে সেই জ্ঞান সমাজের জন্য কল্যাণের বদলে অকল্যাণ বয়ে আনছে। ইসলাম শিক্ষা ও নৈতিকতাকে একসাথে গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছে, যাতে শিক্ষিত মানুষ সমাজে সত্যিকার অর্থে আদর্শ স্থাপন করতে পারে।
কোরআনে আল্লাহ বলেন, “পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আলাক: ১) এখানে প্রথম নির্দেশই পড়াশোনার, তবে তা আল্লাহর নামে। অর্থাৎ জ্ঞান অর্জন হবে এমনভাবে যাতে তা মানুষকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করে, অন্যায় ও পাপ থেকে বিরত রাখে। জ্ঞান কেবল ডিগ্রি নয়, বরং চরিত্র গঠনের হাতিয়ার—এটাই ইসলামের শিক্ষা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যে মানুষদের জন্য সবচেয়ে উপকারী।” (আহমদ) শিক্ষা তখনই কল্যাণকর হয় যখন তা অন্যের উপকারে আসে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় অনেক শিক্ষিত মানুষ দুর্নীতি, প্রতারণা কিংবা স্বার্থপরতায় লিপ্ত হচ্ছে। তাই ইসলাম নৈতিক শিক্ষাকে সব জ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।
ইসলামে শিক্ষকের মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ। হাদিসে এসেছে, “আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীবাসী এমনকি পিঁপড়া ও মাছ পর্যন্তও সেই ব্যক্তির জন্য দোয়া করে, যে মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শেখায়।” (তিরমিজি) এর মাধ্যমে বোঝা যায়, শিক্ষা দেওয়া এবং নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা একটি মহান ইবাদত।
অন্যদিকে ছাত্রদের প্রতিও ইসলামের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। জ্ঞানার্জনের পথে ধৈর্য, বিনয়, শিক্ষক ও জ্ঞানের প্রতি সম্মান অপরিহার্য। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য কোনো পথে চলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।” (সহিহ মুসলিম) তবে সেই জ্ঞান যদি নৈতিকতাহীন হয়, তবে তা কোনো উপকারে আসে না।
আজকের সমাজে নকল, অসততা, ভ্রান্ত প্রতিযোগিতা শিক্ষাক্ষেত্রকে কলুষিত করছে। ইসলাম স্পষ্টভাবে এ ধরনের কাজকে হারাম ঘোষণা করেছে। নকল করে ডিগ্রি অর্জন করা কিংবা অসততার মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতারণা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে প্রতারণা করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (সহিহ মুসলিম)
শিক্ষাক্ষেত্রে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করতে হলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের যৌথ প্রচেষ্টা দরকার। অভিভাবকরা যদি সন্তানকে শৈশব থেকেই ইসলামী আদর্শে বড় করেন, শিক্ষকরা যদি পাঠদানের পাশাপাশি আদর্শচর্চা করান, আর রাষ্ট্র যদি সৎভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করে—তাহলেই একটি নৈতিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
অতএব, ইসলাম শিক্ষা ও নৈতিকতাকে আলাদা করেনি বরং একীভূত করেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা মানেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সৎ, দক্ষ ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। একজন মুমিন ছাত্র-শিক্ষক আল্লাহর ভয়ে যেমন জ্ঞান অর্জন করবে, তেমনি সমাজে ন্যায়ের আলো ছড়াবে। এভাবেই শিক্ষাক্ষেত্রে ইসলামের দিকনির্দেশনা মেনে চললে দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে মুক্তি লাভ করা সম্ভব।