প্রকাশ: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২১
মুমিন জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। দুনিয়ার চাকচিক্য, ধন-সম্পদ কিংবা পদমর্যাদা ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি চিরন্তন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, “আল্লাহর সন্তুষ্টিই সবচেয়ে বড় সাফল্য” (সূরা আত-তাওবা: ৭২)। এই আয়াত আমাদের শেখায় যে, প্রকৃত সফলতা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা, দুনিয়ার অর্জন নয়।
মানুষ প্রায়ই ভুলে যায় যে তার জীবন সীমিত সময়ের। সীমিত সময়ে সীমাহীন কামনা পূরণের চেষ্টা মানুষকে বিপথে নিয়ে যায়। অথচ নবী করিম (সা.) বলেছেন, “সত্যিকার ধন-সম্পদ হলো মন-প্রসাদ” (বুখারি)। অর্থাৎ আল্লাহর দেওয়া অবস্থায় সন্তুষ্ট থাকা মুমিনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এই শিক্ষা আমাদের ভোগবাদী সমাজকে ভিন্ন দিকনির্দেশনা দেয়।
দুনিয়ায় মানুষ নানা সংকট ও পরীক্ষার মুখোমুখি হয়। কেউ হয়তো অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছে, কেউ আবার সামাজিক অপমান বা অবিচারের শিকার হচ্ছে। এসব অবস্থায় মুমিনের জন্য করণীয় হলো আল্লাহর প্রতি আস্থা রাখা ও ধৈর্য ধারণ করা। কারণ আল্লাহ নিজেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, “নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের জন্য সীমাহীন প্রতিদান রয়েছে” (সূরা আয-যুমার: ১০)।
ধৈর্য শুধু কষ্ট সহ্য করা নয়, বরং কষ্টের মাঝেও আল্লাহর উপর আস্থা হারিয়ে না ফেলা। হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, “মুমিনের অবস্থা আশ্চর্যজনক। তার সব অবস্থাই কল্যাণকর। সুখ পেলে কৃতজ্ঞ হয়, তা তার জন্য কল্যাণকর; দুঃখ পেলে ধৈর্য ধরে, তাও তার জন্য কল্যাণকর” (মুসলিম)। এই হাদিস মুমিন জীবনের মূল দর্শনকে পরিষ্কার করে দেয়।
আজকের পৃথিবীতে প্রতিযোগিতা, অন্যায় ও বৈষম্য মানুষের অন্তরে অশান্তি সৃষ্টি করছে। অথচ ইসলামের শিক্ষা হলো তৃপ্তি ও ধৈর্যের মাধ্যমে অন্তরে শান্তি লাভ করা। যখন মানুষ বুঝতে পারে দুনিয়ার সাফল্য ক্ষণস্থায়ী, তখন তার দৃষ্টি পরকালের দিকে কেন্দ্রীভূত হয়। আর এই দৃষ্টি-পরিবর্তনই তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে যায়।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা জান্নাতের সুখবর দিয়ে বলেছেন, “তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী জান্নাত, সেখানে তারা প্রবেশ করবে, তাদের পিতৃপুরুষ, স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্য থেকে যারা সৎকর্মশীল তারাও” (সূরা আর-রা’দ: ২৩)। এই প্রতিশ্রুতি মুমিনকে দৃঢ় করে তোলে, কারণ তার লক্ষ্য শুধু দুনিয়ার সাময়িক প্রাপ্তি নয় বরং আখিরাতের চিরস্থায়ী পুরস্কার।
অতএব, একজন মুসলমানের উচিত তার প্রতিটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা। ব্যবসায়ে সততা, পরিবারে দয়া-ভালোবাসা, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা—সবকিছুর মূলে থাকা উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য। কারণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করলে দুনিয়ার জীবন হবে প্রশান্তিময় এবং পরকাল হবে মুক্তির।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, মুমিন জীবনের আসল সাফল্য মাপা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি দিয়ে। ধন, পদ বা দুনিয়ার ক্ষমতা দিয়ে নয়। তাই আসুন আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলার চেষ্টা করি, ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার আলোকে জীবনকে সাজাই এবং প্রকৃত সফলতার পথে এগিয়ে যাই।