রিক্সা চালক কন্যার দায়িত্ব নিল বসুন্ধরা, সাবনূরের নিবে কে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ১০ই এপ্রিল ২০২২ ০৯:৩৫ অপরাহ্ন
রিক্সা চালক কন্যার দায়িত্ব নিল বসুন্ধরা, সাবনূরের নিবে কে?

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার ২নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ কামারকাঠি গ্রামের দিনমজুর বাবুল মোল্লার মেয়ে সাবনূর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। সাবনূরের উত্তীর্ণের খবরে দিনমজুর এ্যাজমা রোগে আক্রান্ত পিতা বাবুল ও মা সাবিনা বেগম সহ খুশিতে আত্মহারা তার শিক্ষকরাও। সাবনূর সদ্য প্রকাশিত মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। অভাব অনটনের সংসারে উপজেলা থেকে সাবনূরের একার এ অসামন্য কৃতিত্বে তার পিতা মাতার চোখ আনন্দে ছল ছল করছে। তবে, দুশ্চিন্তায় বাবুল মোল্লার পরিবার। এলাকাবাসি বলছেন, বরিশালের বানারিপাড়ায় মেডিকেলে চান্স পাওয়া রিক্সা চালকের মেয়ে হারিসার দায়িত্ব নিল বসুন্ধরা সাবনূরের কি হবে?  সাবনূরের ভর্তি, পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার বলে এ দুশ্চিন্তার কারন। এলাকাবাসির এক কথা,বরিশালের বানারিপাড়ার রিক্সা চালক বাবার মেয়ে হারিসার মেডিকেলের পড়ার খরচের দায়িত্ব নিল বসুন্ধরা। সাবনূরকে চালাবে কে?  তাদের দাবি, বাবুল মোল্লার মেয়ের পড়ার খরচ চালাতে কোন বৃত্তবান লোক যদি এগিয়ে না আসে; তাহলে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন সাবনূরের স্বপ্নই থেকে যাবে।


সাবনূরের বাবা বলেন, আমার ১ ছেলে, ২ মেয়ে। আমি একজন দিনমজুর। তার উপরে বছর পাচেক ধরে এ্যাজমা রোগে আক্রান্ত। আগের মত কাজও করতে পারিনা। আমার স্ত্রী(সাবনূরের মা) একজন গৃহীনি। আমার একার আয়ে পরিবারের ভরন পোষনের কষ্ট হয়। তার তার উপর তিন ছেলে মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চালাতে গিয়ে ধার দেনায় জর্জারিত। আগের মত কাজ করতে পারিনা বিধায় মাজেমধ্যে সাবনূরের মা সংসারের একটু সচ্ছলতায় তিনিও কাজ বাজ করে। তিনি জানান, সাবনূর ছোট থেকে স্কুলে ভাল ছিল। তার শিক্ষকরা তাকে নিয়ে গর্ব করত। পঞ্চম শ্রেনীতে কৃতিত্বের সাথে রেজাল্ট করে এস,এস,সি পরীক্ষায় কামারকাঠি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস অর্জন করে। সে সময়ে ওকে ভাল প্রাইভেটও দিতে পারিনি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কথায় তাদের সহযোগীতায় উপজেলার শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করাই। কলেজের শিক্ষকদের আমাদের অবস্থার কথা খুলে বললে তারা মেয়েকে সহযোগীতা করেন। মোট কথা প্রাথমিক থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত শিক্ষক ও সহপাঠিরা বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করেছে।


সাবনূরের মা সাংবাদিকদের সামনে কেদে বলেন, এমন দিনও গেছে সংসারের অভাবের কারনে তার মেয়ে না খেয়েও কলেজ করেছে। এমনকি এখনও সে অভাব তাদের সংসারে লেগেই আছে। তিনি বলেন, আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়াশুনাকালিন বাবা আমাকে বিবাহ দেয়। তখন আমার পড়া লেখার খুব ইচ্ছা ছিল। তা পারিনি। তাই সেই থেকে মনে মনে পন করি আমার ছেলে মেয়ে হলে তাদের ইচ্ছানুযায়ি পড়াশুনার সুযোগ দিব। সংসারে অভাবের কারনে আমি মানুষের বাড়ীতে মাজে মাজে কাজ করি। রাত ভরে ঘরে বসে পাটি ও হাত পাখা বুনন করি। অভাবের কারনে মেয়েকে কলেজে আসা যাওয়ার ভাড়াও দিতে পারিনি। মেয়ে আমার বাসা থেকে আট কিলোমিটার হেটে হেটে গিয়ে কলেজ করত। দুপুর হলে আবার পায়ে হেটে বাড়ীতে আসত। শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ থেকে ২১-২২ শিক্ষাবর্ষে মেয়ে আমার গোল্ডেন এ প্লাস পায়। ওর প্রাইমারি থেকে এ পর্যন্ত রেজাল্ট দেখে কলেজের মাহমুদ স্যার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার কথা বলে। এতে তিনি আমাদের অনেক সহযোগীতা করেছেন। এখন মেয়ের ভর্তি ও পড়ার খরচ কিভাবে চালাব তা ভেবেই পাচ্ছিনা।    


রোববার দুপুরে সাবনূরের বাড়ী গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় বাড়ীতে নেই কোন আয়োজন। সাবনূরের মা বাবা চোখে আনন্দ দেখা গেলেও ভিতরে ডুবে আছেন গভীর দুশ্চিন্তায়। এখন মেডিকেলের ভর্তির খরচ যোগাতে দিশেহারা বাবা বাবুল মোল্লা ও মা সাবিনা বেগম।


শিক্ষার্থী সাবনূর বলে, আমি প্রাথমিক শিক্ষা জীবন থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত আগাতে শিক্ষক সহপাঠিদের অনুপ্রেরণা ও সহযোগীতা পেয়েছি। আমি মেডিকেলে চান্স পেয়ে এখন ভর্তির জন্য অনেকটা দুশ্চিন্তায় আছি। মা বাবা এ নিয়ে মন খারাপ করে আছে। যদি মেডিকেলে ভর্তি হতে পারি ডাক্তার হয়ে আমি আমার দিনমজুর পিতা ও মায়ের মুখ উজ্জ্বল করব। এ জন্য আমি আমার শুভাকাঙ্খি সকলের কাছে দোয়া চাচ্ছি।


নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মো. মোসারেফ হোসেন জানান, আমি তাদের আমার অফিসে আসতে বলছি। ঘটনা শুনে সাবনূরের মেডিকেল ভর্তিতে যা খরচ হয় তা আমরা বহন করব।