প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৯:৩৭
পরিবার মানুষের জীবনের প্রথম বিদ্যালয়। এখানে একজন মানুষ নৈতিকতা, আচার-আচরণ ও মূল্যবোধ শিখে। ইসলাম পরিবারকে সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখেছে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবারকে আগুন থেকে বাঁচাও” (সুরা তাহরিম: ৬)। এই আয়াত প্রমাণ করে পরিবারের দায়িত্ব হলো সন্তানদের নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া।
দাম্পত্য জীবনে ইসলামের মূল শিক্ষা হলো ভালোবাসা, সম্মান ও দায়িত্বশীলতা। কোরআনে বলা হয়েছে, “তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া স্থাপন করেছেন” (সুরা রুম: ২১)। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।
ইসলামে সন্তানদের লালন-পালনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকেই একজন রাখাল, আর প্রত্যেকেই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জবাবদিহি করবে” (বুখারি ও মুসলিম)। অর্থাৎ বাবা-মা সন্তানের জন্য যেমন রিজিকের ব্যবস্থা করবে, তেমনি সঠিক নৈতিক শিক্ষা দেবে।
পরিবারের মধ্যে ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠা করাও ইসলামের নির্দেশনা। নবীজী (সা.) বলেছেন, “সন্তানদের মধ্যে উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার করো” (বুখারি)। এই হাদিস দেখায় পারিবারিক জীবনে সমতা বজায় রাখা কতটা জরুরি।
পারিবারিক জীবনে ইসলামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শালীনতা ও পর্দা রক্ষা। কোরআনে পুরুষ ও নারী উভয়কেই দৃষ্টি সংযত রাখা ও শালীন পোশাক পরিধান করতে বলা হয়েছে। এটি পরিবারের মধ্যে নৈতিক পরিবেশ বজায় রাখতে সাহায্য করে।
পরিবারে অর্থনৈতিক দায়িত্বে ইসলামের শিক্ষা হলো স্বচ্ছতা ও হালাল রিজিক। নবীজী (সা.) বলেছেন, “সর্বোত্তম দান হলো যা একজন মানুষ তার পরিবারের জন্য ব্যয় করে” (মুসলিম)। অর্থাৎ পরিবারের ভরণপোষণ করা শুধু দায়িত্ব নয়, বরং তা ইবাদতও।
পরিবারে ঝগড়া বা মতবিরোধ হলে ইসলাম সমঝোতা ও ধৈর্যের পরামর্শ দিয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, “যদি তাদের মধ্যে মতবিরোধ হয় তবে উভয় পরিবারের একজন একজন সালিশ আনো” (সুরা নিসা: ৩৫)। এই আয়াত প্রমাণ করে বিরোধ মিটাতে আলাপ-আলোচনার গুরুত্ব।
সবশেষে, ইসলামী আদর্শে গড়ে ওঠা পরিবার সমাজের জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারে ভালোবাসা, ন্যায়, দায়িত্ব ও দীনদারির পরিবেশ থাকলে সেই সমাজও স্থিতিশীল হয়। তাই প্রতিটি মুসলিম পরিবারের উচিত ইসলামের নির্দেশনা মেনে চলা, যাতে একটি সুস্থ, নৈতিক ও আলোকিত সমাজ গড়ে ওঠে।