প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫৫
বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এ প্রেক্ষাপটে ইসলামের নির্দেশনাগুলো আবারও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। ইসলাম কেবল ইবাদতের ধর্ম নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যা ন্যায় ও সাম্যের ভিত্তিতে সমাজ গঠনের শিক্ষা দেয়।
কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ন্যায়বিচারের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। সূরা নিসা’র ৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দেন যে তোমরা আমানত তার হকদারের কাছে পৌঁছে দাও এবং মানুষদের মধ্যে বিচার করলে ন্যায়বিচার কর।” এই আয়াত মুসলমানদের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা যে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা একান্ত দায়িত্ব।
রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি কোনো অন্যায় দেখে তবে তা হাত দিয়ে পরিবর্তন করুক, না পারলে মুখ দিয়ে, তাও না পারলে অন্তরে ঘৃণা করুক, আর এটি ঈমানের সবচেয়ে দুর্বল স্তর।” (মুসলিম শরীফ)। এই হাদিস সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখার শিক্ষা দেয়।
বর্তমান সমাজে দুর্নীতি, বৈষম্য ও অবিচার বাড়ছে। ইসলামের দৃষ্টিতে এসব কাজ অন্যায় এবং পাপ। কুরআন ও হাদিসে বারবার সতর্ক করা হয়েছে যেন কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার না করে, কারো হক নষ্ট না করে এবং বিচার ব্যবস্থায় পক্ষপাতিত্ব না করে।
সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা কেবল সরকারের কাজ নয়, বরং প্রতিটি ব্যক্তির দায়িত্ব। পরিবারের মধ্যে, কর্মক্ষেত্রে এবং সামাজিক জীবনে ন্যায়পরায়ণতা চর্চা করা একজন মুসলমানের জন্য ফরজের মতো গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজে আস্থা, শান্তি এবং সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়।
অন্যদিকে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইসলামে কোনো প্রকার বৈষম্যের সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর জীবনের একটি বড় দৃষ্টান্ত হলো—তিনি তাঁর প্রিয় সাহাবী হোক বা সাধারণ কেউ হোক, আইনভঙ্গ করলে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেননি। এতে বোঝা যায় ইসলাম আইনের শাসন নিশ্চিত করে।
বর্তমান সময়ের মুসলমানদের উচিত ইসলামের এই দিকনির্দেশনাগুলোকে জীবনে প্রয়োগ করা। ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ—সব পর্যায়ে ন্যায়, সমতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখলে একটি উত্তম সমাজ গড়ে উঠবে। এতে শুধু সামাজিক অশান্তি কমবে না, বরং মানুষের মধ্যে আস্থা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা বাড়বে।
সবশেষে বলা যায়, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ইসলামের অন্যতম মূল ভিত্তি। তাই মুসলমানদের উচিত কুরআন ও হাদিসের আলোকে নিজেদের জীবন পরিচালনা করা এবং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা। এভাবেই একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।