প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৭
দুর্নীতি ও অনৈতিকতা মানবসমাজের শান্তি নষ্ট করে এবং মানুষের নৈতিক চরিত্রকে ধ্বংস করে দেয়। ইসলাম এ বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না এবং মানুষদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার জন্য বিচারকদের ঘুষ দিও না” (সুরা বাকারা: ১৮৮)। এই আয়াত সরাসরি দুর্নীতি ও ঘুষকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যিনি ঘুষ দেন এবং যিনি ঘুষ নেন উভয়েই জাহান্নামে” (সুনান আত-তিরমিজি)। এই হাদিস প্রমাণ করে যে ইসলামে ঘুষ শুধু গ্রহণ করা নয়, দেওয়া দুটোই বড় গুনাহ।
ইসলামের দৃষ্টিতে দুর্নীতি কেবল আর্থিক নয়, বরং নৈতিক বিচ্যুতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, মিথ্যা ও পক্ষপাতিত্বও এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, “তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং সত্য গোপন করো না” (সুরা বাকারা: ৪২)। এই আয়াত সত্যনিষ্ঠ থাকতে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়।
দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজে ন্যায়বিচার হারিয়ে যায় এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যখন মানুষের মধ্যে আমানতদারি থাকবে না তখন কিয়ামতের জন্য অপেক্ষা করো” (সহিহ বুখারি)। এই হাদিস প্রমাণ করে যে দুর্নীতি ও আমানতখিয়ানত সমাজ ধ্বংসের অন্যতম কারণ।
ইসলামের দৃষ্টিতে নেতৃত্ব, প্রশাসন বা ব্যক্তিগত জীবনের সব ক্ষেত্রে সততা বজায় রাখা ফরজ। নবী (সা.) বলেন, “আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সেই ব্যক্তি, যার হাতে এবং মুখে অন্যরা নিরাপদ” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। এই হাদিস স্পষ্ট করে দেয় যে একজন মুসলিমের চরিত্রে নিরাপত্তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকা অপরিহার্য।
দুর্নীতি ও অনৈতিকতার বিরুদ্ধে সমাজের প্রত্যেক সদস্যকে সচেতন থাকতে হবে। কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা সৎকাজে সহযোগিতা করো আর পাপ ও সীমালঙ্ঘনে সহযোগিতা করো না” (সুরা মায়েদা: ২)। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে সমাজে সম্মিলিতভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা মুসলমানদের দায়িত্ব।
দুর্নীতি থেকে বাঁচতে হলে আল্লাহভীতি বা তাকওয়া গড়ে তুলতে হবে। তাকওয়া একজন মানুষকে আল্লাহর ভয় দেখায় এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। সুরা হাশর (আয়াত ১৮) তে বলা হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আগামী দিনের জন্য যা প্রেরণ করেছ তা দেখো।”
সবশেষে বলা যায়, ইসলাম দুর্নীতি ও অনৈতিকতার বিরুদ্ধে শুধু আইন নয়, হৃদয়ে ঈমান ও আল্লাহভীতি জাগ্রত করে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাই প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব সততার পথে থাকা, অন্যকে উৎসাহিত করা এবং সমাজে ন্যায় ও সত্যের আলো ছড়িয়ে দেওয়া।